আশিক্কীনে আউলিয়া ঐক্য পরিষদ

01711134624

মুক্তির একই পথ, ওলি-আউলিয়ার ত্বরিকত !

মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতায় বিশ্বাসী পীর মাশায়েখ, সূফী সাধক, হাক্কানী আলেম ওলামা, অলি-আউলিয়া অনুসারী সকল ধর্মাবলম্বী ও সুন্নী জনতার অসাম্প্রদায়িক সংগঠন

“জঙ্গিবাদ নির্মূল ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার” সেমিনারে সভাপতির বক্তব্য

অদ্য ১২ই নভেম্বর ২০২২ইং রোজ শনিবার “জঙ্গিবাদ নির্মূল ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার” শিরোনামে আশিক্কীনে আউলিয়া ঐক্য পরিষদ বাংলাদেশ এর উদ্যোগে সেমিনার ঢাকা জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব আমির হোসেন আমু, এমপি, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র এবং সভাপতি- শিল্প মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত স্থানীয় কমিটি, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব জাকির হোসেন, এমপি, মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আশিক্কীনে আউলিয়া ঐক্য পরিষদ বাংলাদেশ সংগঠনে পক্ষ থেকে প্রধান অতিথি জনাব আমির হোসেন আমু, এমপি হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন সভাপতি শাহ্ সূফী সাইয়েদ আলম নূরী আল্ সুরেশ্বরী এবং বিশেষ অতিথি জাকির হোসেন, এমপি হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন মহাসচিব আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা আবু হানিফ। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শাহ্ সূফী সাইয়েদ আলম নূরী আল্ সুরেশ্বরী, সভাপতি- আশিক্কীনে আউলিয়া ঐক্য পরিষদ বাংলাদেশ।

সকলের জন্য সভাপতির বক্তব্যটি অনুরূপ তুলে ধরা হল-

  • নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম। আম্মা বাদ। আশিক্কীনে আউলিয়া, মঞ্চে উপবেষ্ঠিত মাননীয় প্রধান অতিথি, মাননীয় বিশেষ অতিথি বৃন্দ, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত পীর মাশায়েখ ওলামা বৃন্দ, উক্ত পরিষদের সকল নেত্রীবৃন্দ, সকল সদস্য/সদস্যা বৃন্দ আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আশিক্কীনে আউলিয়া ঐক্য পরিষদ ১৯৯০ সাল থেকে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ২০২২ সালের শেষ প্রান্তে এসে অদ্য বত্রিশ বছর যাবৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামে উক্ত পরিষদের অধিকাংশ নেতা কর্মীরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। বাসনা ছিল সোনার বাংলা হবে প্রতিটি মানুষের জন্য সুখ ও শান্তির স্থান। যেখানে থাকবে না কোন সাম্প্রদায়িকতা মানুষে মানুষে ভেদাভেদ অহংকার হিংসা নিন্দা। হিন্দু মুসলমানে হানাহানি মারামারি এক ধর্মাবলম্বিরা আরেক ধর্মের উপর অহেতুক ফতুয়া দিয়ে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার, নির্যাতন, বোমাবাজি ইত্যাদি। ধর্মের নামে অপব্যাখ্যায় মগজ ধোলাই করে সাধারন মানুষকে জঙ্গিবাদের মত জঘন্য পথে চালিত করা সহ হত্যা, কতল অগ্নিসংযোগ বোমাবাজী ইত্যাদি অনৈইসলামি কর্মকান্ড ইসলামের নামে চালিয়ে দেওয়া। ওয়াজের নামে গ্রাম গঞ্জের ধর্ম ভিরু সহজ সরল সাধারন মানুষ একত্র করে বিশাল বিশাল সভার মাধ্যমে রাষ্ট্র বিরোধী কথা বার্তা, সরকারের কঠোর নিন্দা, মহান আউলিয়া কেরামগনের প্রতি বিরুপ মন্তব্য অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের অসম্মান সহ সাম্প্রদায়িকতার দিকে ধাবিত করে সর্বসাধারণকে উস্কানি দিয়ে পথভ্রষ্ট করা। এখানেই শেষ নয় ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করে ঘরে ঘরে মা বোন ও আবাল বৃদ্ধা বনিতার সুকমল হৃদয়ে গোমরাহি সৃষ্টি করা। যা কিনা পবিত্র কোরআন সুন্নাহ বিরোধী মনগড়া মতবাদ। এই মৌলবাদী গোষ্ঠী কখনো ছবি তোলা হারাম, কখনো ইংরেজী পড়া হারাম আবার কখনো ভাস্কর্যকে মূর্তি হারাম ফতোয়া দিয়ে তার স্থাপনাতে বাধা সৃষ্টি করে নিজস্ব সংস্কৃতিকে ভবিষ্যত প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে ব্যাঘাত ঘটায়। ছামা-জিকির মাহ্ফিলকে এরা বিভিন্ন জায়গায় বাধা প্রদান করে ফেতনা ফ্যাসাদের অবতারনা করে। বর্তমানে বেশ কিছু দিন যাবৎ গভীর ভাবে লক্ষ করছি প্রায়ই দেশের আনাচে কানাচে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলে সংঘবদ্ধ হয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এবং ভারী অস্ত্রে সুসজ্জিত হয়ে আক্রমণের পরিকল্পনায় এগিয়ে যাচ্ছে। তারা ধার্মিকতার লেবাজে সাধারণ মানুষের মাঝে ঘাপটি মেরে আছে, এদের চিহ্নিত করে আইনে সোপর্দ করতে হবে। মনে রাখতে হবে সাম্প্রদায়িকতাই জঙ্গিদের মূল লক্ষ, ধর্মের অজুহাতে মানুষে মানুষে দাঙ্গা সৃষ্টির পায়তারা চালিয়ে যাবে। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টায় অব্যাহত থাকবে। মদিনা সনদের ধারাবাহিকতায় সকল ধর্মের প্রতি সম্মান রেখে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সকল শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে এদের প্রতিহত করতে হবে। সরকারের প্রতি আমাদের জোর দাবী দেশের সকল দরগাহ্, মাজার, খানকাহ, আস্তানায় নজরদারী ও নিরাপত্তা আরো জোরদার করতে হবে। এ দেশ অলি আউলিয়ার অসাম্প্রদায়িক দেশ। এখানে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাকে নির্মূল করে সকল ধর্মের বসবাসের উপযোগী করে তুলতে হবে। যদিও সরকার এ বিষয়ে যথেষ্ট তৎপর তবুও আমাদের অগ্রণী ভূমিকা সর্বদা অব্যাহত রাখতে হবে। কেননা আল্লাহ্ ও আল্লাহর রাসূল (সাঃ), সাহাবাকেরাম, তাবেইন, তাবেতাবেইন পরবর্তীতে আউলিয়াগণ ইসলাম যে অসাম্প্রদায়িক সহজ সরল পথ মানব জাতিকে এ বিষয় সতর্কতার সাথে পালন করার আহ্বান করে গেছেন। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা বান্দার বিষয় নয়। যে কারণে আল্লাহ্ যুগে যুগে নবী, রাসূল প্রেরণ করেছেন। আমরা তাঁদের প্রদর্শিত পথে নিজ নিজ ধর্ম পালন করে যাব। আশিক্কীনে আউলিয়া ঐক্য পরিষদ এর মূল লক্ষ, রাসূল (সাঃ) এর প্রতি প্রেম হৃদয়ে ধারণ করে মানব সেবায় আত্ম নিয়োগ করা। সুতরাং সারা বাংলায় লক্ষ লক্ষ দরগাহ্, মাজার, খানকাহ, আস্তানা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পূর্বের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ থাকা। ইনশাআল্লাহ্ মহান আউলিয়াগণের দয়ায় আমরা একদিন মঞ্জিলে মকসুদে পৌছবই। আমাদের জানা আছে এখনও দেশের শত শত স্থানে দরগাহ্, মাজার, আস্তানা, খানকায় মৌলবাদীদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে প্রশাসন উরস মাহ্ফিল বন্ধ করে দিচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি করছি। কারণ সূফীদের উরস মাহ্ফিল অসাম্প্রদায়িক মানবতাময় সভা সমাবেশ মাত্র। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার পক্ষের একটি শক্তি। প্রিয় আশেক্কীন, প্রবল মনোবল নিয়ে আমরা মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছি চিরকাল। যে কারণে নানা সময় আমাদের জীবননাশের হুমকি ধামকির মোকাবেলা করতে হচ্ছে তবুও আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) এর প্রতি বিশ্বাস ভরসা রেখে এগিয়ে যেতে হবে ইনশাআল্লাহ্। আজ দুঃখের সাথে স্মরণ করছি তিন যুগ যাবৎ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লক্ষাধিক ছোট বড় দরগাহ্, মাজার, খানকাহ, আস্তানার কোটি কোটি অনুসারী আশেক ভক্তরা আজও অভিভাবকহীন। অর্থাৎ সূফীদের উপর অন্যায় অত্যাচারে প্রতিকার দেবার কেউ নেই। সারা বাংলায় লক্ষাধিক খানকাহ, আস্তানা গুলো জীর্ণশীর্ণ অবস্থা, সংস্কার করা পর্যন্ত আশেক্কীনদের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠছে না। চিরকালই সূফীগণ অহিংস অসাম্প্রদায়িক ছিলেন কারও মুখাপেক্ষী ছিলেন না আজও পূর্বাবস্থায় বিরাজমান। বর্তমানে মৌলবাদী ও স্বাধীনতা বিরোধীদের অপতৎপরতায় স্বাধীনতার পক্ষের এ ছোট ছোট শক্তি গুলো ধংসের মুখে পতিত হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা আপনি মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, প্যাগোডায় অনেক দান অনুদান করেছেন কিন্তু সারা বাংলায় দরগাহ্, মাজার, খানকাহ, আস্তানায় দান অনুদান করা হয়নি, যে প্রতিষ্ঠান গুলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। দান অনুদান পেয়ে বিরোধীরা ফুলে ফেপে উঠেছে আর প্রকৃত শক্তি নির্জিব হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। তাই আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি দরগাহ্, মাজার সমূহকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কাজ করার সুযোগ করে দিতে এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, কোটি কোটি আশেক্কীনদের অভিভাবক হিসেবে আগামী দিনের করণীয় দিকনির্দেশনা কামনা করছি। আমরা দাবী করি সরকার নিয়ন্ত্রিত সকল দরগাহ্, মাজার সমূহের পরিচালনা কমিটিতে আউলিয়া অনুসারী ত্বরিকতপন্থী অর্থাৎ আল্লাহর অলি আউলিয়াগণকে বিশ্বাস ও ভক্তি করে এ ধরণের লোকদের মাধ্যমে কমিটি গঠন করতে। কেননা তাহলেই আউলিয়াগণের প্রদত্ত সঠিক পথ বা অসাম্প্রদায়িক বাণী সাধারন মানুষের নিকট পৌছাবে। আশা করি সরকার এ ব্যাপারে এগিয়ে আসবেন।

পরিশেষে সকল ত্বরিকতপন্থী অলি ভক্ত প্রকৃত মুসলমানদের ইসলামের নামে জঙ্গি কর্মকান্ড এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে আরো দৃঢ় ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তোলার সবিনয় অনুরোধ জানাই। আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ।

শাহ্ সূফী সাইয়েদ আলম নূরী আল্ সুরেশ্বরী

সভাপতি- আশিক্কীনে আউলিয়া ঐক্য পরিষদ বাংলাদেশ।

আশিক্কীনে আউলিয়া ঐক্য পরিষদ বাংলাদেশ এর উদ্যোগে “জঙ্গিবাদ নির্মূল ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার” শিরোনামে অনুষ্ঠিত সেমিনারে অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মহাসচিব আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা আবু হানিফ, সহ-মহাসচিব- সৈয়দ শাহ্ নূরে আফতাব পারভেজ নূরী। সহ-সভাপতি মণ্ডলীর মধ্যে বক্তব্য রাখেন- পীরজাদা সৈয়দ মনোয়ার হোসেন রেজভী, শাহ্ সূফী মোঃ বদরুল আমিন রেজভী, সৈয়দ শফিক আহমদ চিশতি, সৈয়দ মোঃ মাজেদুল হক চাঁদপুরী, অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যুগ্ন মহাসচিব মহিউদ্দিন আলম চিশতী বাপন, সহ-যুগ্ন মহাসচিব মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন আব্বাস, সহ মহাসচিব- সাইয়েদ শাহ্ নূরে তৌহিদ হোসেন শাহিন নূরী, সহ মহাসচিব- শামসুজ্জামান চৌধুরী সজিব, সাংগঠনিক সচিব- শাহ্ নূরে জামান দিদার নূরী, সহ সাংগঠনিক সচিব- মোঃ আতিকুর রহমান। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন সাংগঠনিক সচিব শাহ্ নূরে হাসান দিপু নূরী, সৈয়দ ফারহান হোসেন রেজভী বৈরাবরী। এছাড়া শাহ্ সৈয়দ সাঈদ আনোয়ার মোবারকী আল্ কাদরী, সৈয়দ শাহ্ নূরে সিফাত নূরী, সাইয়্যেদ তরীকুল হোসাইন উৎস নূরী সহ আশিক্কীনে আউলিয়া ঐক্য পরিষদ বাংলাদেশ সংগঠনের সকল নেতৃবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন।