আন্তরিক শুভেচ্ছান্তে, ‘আশিক্কীনে আউলিয়া ঐক্য পরিষদ বাংলাদেশ’ দেশের মহান অলি-আউলিয়াগণের পবিত্র মাযার, দরগাহ, দরবার, আস্তানা ও খানকাসমূহের প্রতিনিধি এবং ভক্তবৃন্দের সমন্বয়ে গঠিত দেশব্যাপী একমাত্র সংস্থা।
দেশে একশ্রেনীর রাজনৈতিক ইসলামপন্থীদের ত্বরিকত ও পীর-আউলিয়া এবং তাঁদের পবিত্র মাযার বিরোধী জঘন্য অপতৎপরতা ও কুৎসা রটনার প্রেক্ষিতে সাবেক ‘বাংলাদেশ আশিক্কীনে আউলিয়া পরিষদ’- এর মুরব্বীগণ উপলবদ্ধি করেন যে, দেশের সব পবিত্র মাযার, দরবার, দরগাহ, আস্তানা এবং খানকাসমূহকে যথাসম্ভব ঐক্যবদ্ধ করে ত্বরিকতপন্থীদের দেশব্যাপী একটি শক্তিশালী সংস্থা গড়ে তোলা সময়ের দাবী এবং দাবী পূরণে ব্যর্থ হলে ভবিষ্যতে ত্বরিকতপন্থীদের কঠিন প্রতিকূলতার আশঙ্কা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট মুরব্বীগণের উক্ত উপলব্দধি ও সিদ্ধান্ত মোতাবেক সাবেক ‘বাংলাদেশ আশিক্কীনে আউলিয়া পরিষদ’- এর পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন মাযার, দরবার, দরগাহ, আস্তানা ও খানকার মুরব্বীদের নামে হাজারাধিক চিঠি ও সদস্য ফরম পাঠানো হয় এবং অনেকের সাথে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করা হয়। এতে অনেকেই প্রেরিত ফরম পূরণ করে প্রদত্ত ঠিকানায় পাঠান।
উক্তরূপে প্রাপ্ত পবত্র মাযার, দরগাহ, দরবার, আস্তানা ও খানকাসমূহের মনোনীত প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ও ঐক্যমতের ভিত্তিতে বিগত ১৯-০২-০৪ তারিখ ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সভায় ‘বাংলাদেশ আশিক্কীনে আউলিয়া পরিষদ’কে একীভূত করে উক্ত পরিষদের কর্মকর্তাদের অন্তর্ভূক্ত করে উপস্থিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে বৃহত্তর পর্যায়ে ‘আশিক্কীনে আউলিয়া ঐক্য পরিষদ বাংলাদেশ’ গঠিত হয়।
উল্লেখ্য যে, উক্ত সভায় পরিষদের আদর্স, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্বলিত একটি পূর্ণাঙ্গ গঠনতন্ত্র অনুমোদিত হয়। উক্ত গঠনতন্ত্রভুক্ত আদর্শ, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সমূহের উধৃতাংশ নিম্নরূপঃ
আদর্শগত বিশ্বাসঃ
১। আমরা বিশ্বাস করি, কোর’আন একটি জীবনদর্শন এবং কোর’আনের ভাষায়, সকল মানুষ এক জাতি। সকল মানুষ অভিন্ন উপাদান ও অসীম আল্লাহর প্রকৃতির সমন্বয়ে সৃষ্টি বিধায় তাঁদের প্রকৃতিগত ধর্মও একই এবং অভিন্ন। ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য এ ধর্মের মোউল উপাদান রবং শান্তি ও মুক্তি- এর চূড়ান্ত লক্ষ্য। অন্যান্য প্রানী থেকে মানুষের স্বাতন্ত্র্য যে রুহানীয়াত বা আধ্যাত্মিকতা তা এ ধর্মের নিয়ামক বা প্রাণশক্তি এবং আধ্যাত্মিকতার শির্ষ ও সে- অসীমের অনুকম্পাপ্রাপ্ত মানব শ্রেষ্ঠগণের শিক্ষা-দীক্ষা ও অনুসৃত পথ–পদ্ধতিই ধর্মের উক্ত চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌছার উপায় “সিরাতুল মুস্তাক্কীম”।
২। আমরা আরও বিশ্বাস করি ‘স্বদেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ’। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সাধ্যমত আত্মত্যাগ, দেশবাসির সার্বিক উন্নতি, স্বাচ্ছন্দ্য, শান্তিময় জীবনযাপন ও চূড়ান্ত মুক্তির অনুকূলে আত্মনিয়োগ এবং অনুরূপ উদ্যোগের সাথে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা প্রত্যেক নাগরিকের অলঙ্ঘনীয় ধর্মীয় কর্তব্য আর ধর্মের সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক ব্যবহার জঘন্যতম পাপ।
উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যঃ
১। “ফানা হয়ে বাক্কা” অর্থাৎ যা থেকে আগত সে- আল্লাহতে আত্মলীন হও্যাতেই মানব জীবনের চূড়ান্ত সফলতা। উক্ত মোউল লক্ষ্য বর্জিত আনুষথানিকতার আবর্তে আবদ্ধ মানুষকে উল্লেখিত চূড়ান্ত সফলতার লক্ষ্যে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করা এবং শরিয়াৎ, ত্বরিকৎ, হাকিকৎ ও মারেফাৎ বিষয়ে সঠিক ধারণা ভিত্তিক সুদৃঢ় বিশ্বাস গঠন করা।
২। ধর্মের সাম্প্রদায়িক ও ইসলামের রাজনৈতিক ব্যবহারের কারণে এবং বিশেষ করে ধর্ম চর্চা ও ধর্ম চর্যায় আধ্যাত্মিক অনুশিলনের অভাবে, ধর্ম ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য এবং শান্তি ও মুক্তির সর্বজনীন প্রেমময় আবেদন হারিয়ে ক্রমান্বয়ে হানাহানির হাতিয়ারে পরণত হচ্ছে। এমতাবস্থায় আধ্যাত্মিকতার সর্বজনীন প্রেমময় শিক্ষা-দীক্ষার ব্যাপক প্রচার ও অনুশীলনের মাধ্যমে ধর্মের সে হারানো সর্বজনীন আবেদন পুনরুদ্ধার করা।
৩। যৌবন মানুষের শ্রেষথ সম্পদ এবং যৌবনের নিবেদন আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয়। সুতরাং যৌবন ও যৌবনের নিবেদনকে সর্বাধিক কল্যানকর করার লক্ষ্যে আধ্যাত্মিক শিক্ষা-দীক্ষার আলোকে যুবকদের আত্মজ্ঞান, মানব চেতনা ও বিশ্ববোধে সমৃদ্ধ করা।
৪। আল কোর’আন নর-নারীর সমমর্যাদার দলিল এবং ধর্ম-কর্মের ফলাফলে কোর’আনে তাঁদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই, এ বিষয়ে তাঁদের সচেতন ও সক্রিয় করা।
৫। পবিত্র দরবার, মাযার, আস্তানা, খানকাহ ও দরগাহসমূহের উন্নয়নের চেষ্টা এবং তাঁদের মধ্যে আন্তসংযোগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পারস্পরিক আন্তরিকতা বৃদ্ধি করা এবং সকলের অনুষথানাদিতে সকলে সাধ্যমত যোগদান ও সহযোগিতা প্রদানের চেষ্টা করা।
৬। আশিক্কীন সমন্বিত সেবামূলক কার্যক্রম পরিচাওলনা করা এবং দেশের দৈব-দুর্যোগ ও সংকট মুহুর্তে যথাসাধ্য অবদান রাখা।
৭। বাংলাদেশ সরকারের আইনের আওতায় যথানিয়মে দেশের মধ্যে ও বাইরেও সমমনা ব্যক্তি ও সংগঠন বা সংস্থার সাথে যোগাযোগ স্থাপন ও আদর্শগত ভাবের আদান-প্রদান করা।
৮। ধর্মীয় ও হাতীয় বিশেষ বিশেষ দিবস ও পর্ব উপলক্ষ্যে এ পরিষদের আদর্শ, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের সাথে সঙ্গতি রেখে সভা, সম্মেলন, সেমিনার, রচনা প্রতিযোগিতা ও আলোচনা সভা এবং মরমী সঙ্গীত ও তত্ত্বগীত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা, পুস্তক-পুস্তিকা ও পত্র-পত্রিকা প্রকাশ করা এবং অন্যান্য প্রচার মাধ্যমে পরিষদের আদর্শগত বক্তব্য প্রচার করা।
৯। পরিষদের অন্তর্ভুক্ত কোন শাখা পর্ষদ বা ব্যক্তি পরিষদের আদর্শ-উদ্দেশ্যগত কোন বিষয়ে বিরোধ, প্রতিরোধ বা সংকট অথবা সমস্যার সম্মুখীন হলে সম্মিলিতভাবে তা মোকাবেলা ও উত্তরণের চেষ্টা করা।
১০। ধর্মীয় ও সাংগঠনিক বিষয়ে প্রয়োজনে সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিনিধিত্ব করা।